টপিকঃ অর্নবীয়
নতুন কলোনীটা অর্নবের খুবই পছন্দ হয়েছে। কলোনীর আঙ্কেল-আন্টি, সিনিয়র-জুনিয়র, গেটের চৌকিদার, সহজকথা কলোনীর আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলের কাছেই অর্নব খুব প্রিয় একটি নাম। আর হবেই বা না কেন? এরকম বিনয়ী ছেলেকে কে না পছন্দ করে। ছেলেটা এতটাই বিনয়ী যে একজনকে পিছনে পিছনে গামলা নিয়ে ঘুরতে হয় বিনয়ে বিগলিত অর্নবকে ধরে রাখার জন্য। কলোনীর জুনিয়র ছেলে আর বাচ্চা মেয়েগুলো অর্নবদা বলতে অজ্ঞ্যান। অর্নবের ইমপ্যাক্ট এতটাই সিভিয়ার যে, কলোনীর জুনিয়র ছেলে আর বাচ্চা মেয়েগুলোর যদি কোন মেডিকেল ইমার্ঞ্জেসীতে অ্যানেস্হেসিয়ার দরকার হয়, তাহলে হাসপাতালে অর্নবকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওকে দেখে রোগীরা ‘অর্নবদা বলতে অজ্ঞ্যান’ হয়ে যায়। অ্যানেস্থেসিয়ার আর দরকার হয় না। কলোনীর আঙ্কেল-আন্টিদের কাছে অর্নব খুবই সুশীল একটি ছেলে, বিনয়ের অবতার। কেউ একবার কল্পনাও করতে পারে না যে, এই সুশীল, বিনয়ী, ভদ্র ছেলেটির ছাব্বিশ বছরের জীবনে ঊনত্রিশটি প্রেম হয়েছে। অবশ্য কল্পনা করতে পারার কথাও না। কারণ সবগুলো সম্পর্কই ছিলো হাফ-ওয়েভ রেক্টিফায়ারের মত। অর্থাৎ অর্নবের দিক থেকে একশ ভাগ। কিন্তু অপরপক্ষ থেকে শুন্য ভাগ। এই নিয়ে অর্নবের মনে দুঃখের শেষ নাই। তার মানে এই নয় যে অর্নব হতাশ। আজও ও বিপুল বিক্রমে ত্রিশ নাম্বারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরপরও অন্য সিনিয়র ভাইয়েরা যখন প্রেম করে বা বিয়ে করে তখন অর্নবের একটু দুঃখ লাগে। আর বিয়ের পর যখন তারা পাক্কা বৌ-পিয়াসী হয়ে অর্নবদের সময় দেয় না, তখন আরো বেশী দুঃখ লাগে।
অর্নবের চশমা আছে। ফ্যাশন গ্লাস নয়। রীতিমতো পাওয়ারওয়ালা চশমা। ডাক্তার সবসময় চশমা ব্যবহার করতে বলেছে। কিন্তু সে চশমা সবসময় না পরে গলায় ঝুলিয়ে রাখে। এইটার কারণ সে কাউকে না বললেও কথিত আছে যে, তার অতীত জীবনের জনৈক সুন্দরী তাকে বলেছিলো যে, চশমা ছাড়া নাকি ওকে চরম ড্যাশিং লাগে। এই কথা শোনার পর কার বাপের সাধ্য আছে যে ওকে চশমা পড়ায়? তবে কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে (যখন কোন সুন্দরী হেটে যায় এবং তাকে যখন চশমা ছাড়া স্পষ্ট দেখা যায় না।) সে এই নিয়মটাকে শিথীল করে।
কিছুদিন হলো কলোনীর এক সিনিয়র বড়ভাই বিয়ে করেছে। বিয়ের পরদিন থেকেই তার মধ্যে আমুল পরিবর্তন। খেলা পাগল বড়ভাই এখন খেলার জন্য নিচেই নামেনা। আবার আগে যেই বড়ভাইয়ের বেডরুমের জানালার পর্দা সবসময় সরানো থাকতো, এখন তা সবসময় টানা থাকে। বড়ভাই ওদের কারো ফোনও ধরে না। খুবই চিন্তার বিষয়। অর্নব ও তার গ্যাং বড়ভাইকে খুবই মিস করছে। তাই আর থাকতে না পেরে বড়ভাইদের বাসার সামনে গিয়ে দাড়ালো। ঠিক হলো যে সরাসরি বড়ভাইকে ক্রিকেট খেলার জন্য নিচ থেকে ডাক দিবে। ওরা খালি ডাক দিতে যাবে ঠিক সেই সময় অর্নব দেখলো যে বড়ভাই বারান্দায় বেরিয়ে এসেছে। অর্নব হাস্যজ্জ্বল মুখে বড়ভাইকে বললো, “কি বড়ভাই, কি অবস্থা? বিয়ের পর আমাদের ভুলেই গেলেন? এখনতো খেলতেও আসেন না। কি ভাবী কি খেলার কথা বললে দৌড়ানি দেয় নাকি?” পাশ থেকে অর্নবকে এক জুনিয়র কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো। অর্নব বিরক্ত হয়ে ওকে থামিয়ে দিয়ে বলেই চললো, “শোনেন, খেলতে আসেন। এখনই সময় বড়ভাই। যা করার প্রথমেই করতে হবে। নাহলে সারা জীবন জরুকা গুলাম হয়েই থাকতে হবে।” অর্নব আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু দেখলো বড়ভাই বাসার ভিতরে চলে গেলো। কিছুটা অপ্রস্তুত অর্নব পাশে দাঁড়ানো জুনিয়রকে উদ্দেশ্য করে বললো, “দেখছিস? কাজ হইছে। কোন কথা না বাড়ায় সুরসুর করে নিচে আসতেসে খেলার জন্য।” জুনিয়রটি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, “কাজ হইছে না কচু হইছে। আপনারে কতবার থামানোর চেষ্টা করলাম। কইতে চাইলাম যে চশমাটা পরেন। শুনলেনই না। উল্টা আমারে থামায় দিলেন। আরে অর্নবদা, ওইটা বড়ভাই আছিলো না। ভাবী আছিলো। ”