টপিকঃ তার কাছে অনিয়মই নিয়ম
সকাল ৯টায় অনুশীলন শুরু। আগের রাতে টিম ম্যানেজার সময়মতো মাঠে হাজির হওয়ার তাগাদা দিয়ে গেলেন সবাইকে। কিন্তু পরের দিন দেখা গেল শোয়েব মাঠে নেই। কিংবা টিম মিটিংয়ে তিনি হাজির হয়েছেন নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। কোনো সফর শেষের ম্যানেজারের রিপোর্টে শোয়েবের বিপক্ষে এ রকম অভিযোগ এসেছে অনেকবারই। তাঁর নিয়মভাঙার গন্ডিটা বেশ বিস্তৃত।
কখনো অনুশীলনে, কখনো ড্রেসিংরুমে সহখেলোয়াড় কিংবা কোচের সঙ্গে তর্কাতর্কি করেছেন, কখনো ইনজুরির দোহাই পেড়ে মাঠে না গিয়ে হোটেলে থেকেছেন, পরে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন বিনোদনের খোঁজে। বল টেম্পারিং, ড্রাগ সেবন−কোন কেলেঙ্কারিই না ছোঁইনি শোয়েবকে। এক শ মাইলের ব্যারিয়ার ভাঙা শোয়েব যতটা না আলোচিত হয়েছেন তাঁর ক্যারিয়ার নিয়ে, এর চেয়ে শতগুণ বেশি খবরের শিরোনাম হয়েছেন অনিয়ম আর বিতর্কের জন্ন দিয়ে। সেসব অনিয়ম-বিতর্কের কিছু নমুনা−
১৯৯৬
পাকিস্তান ‘এ’ দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফরে দলীয় আচরণবিধি ভঙ্গ করেন শোয়েব। সফরে ২৫ উইকেট নিয়ে ঔজ্জ্বল্য ছড়ালেও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে টরন্টোর সাহারা কাপে পাকিস্তানের সিনিয়র দলে জায়গা হয়নি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকটাও এতে পিছিয়ে যায় তাঁর।
২০০০
অস্ট্রেলিয়া সফরে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে পাকিস্তান বোর্ড (পিসিবি) কর্তৃক ৮৭০ ডলার জরিমানা।
২০০৩
দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের পর পর অধিনায়ক ওয়াকার ইউনিসের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করেন শোয়েব। আরও অনেকের সঙ্গে দল থেকে বাদও পড়েন তিনি। তাঁর আচরণে ক্ষুদ্ধ সে সময়ের বোর্ড চেয়ারম্যান তৌকির জিয়া এই বলে তাঁকে হুঁশিয়ারও করে দেন, নিজের আচরণ না বদলালে, দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি সম্মান না দেখালে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ। মে মাসে শ্রীলঙ্কায় ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে বল টেম্পারিংয়ের দায়ে নিষিদ্ধ হন তিনি। মুসলিমদের জন্য পবিত্র এক রাতে ফ্যাশন শোতে যাওয়ার জন্য পাকিস্তানি এক নাগরিক মামলা করে তাঁর বিপক্ষে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে পল অ্যাডামসের সঙ্গে দুর্বযবহার করে এক টেস্ট ও দুটি ওয়ানডের জন্য বহিষ্ককৃতও হন।
নিউজিল্যান্ড সফরে ইনজুরির কারণে একটা টেস্ট খেলতে পারেননি। কিন্তু এর এক দিন আগেই নিউজিল্যান্ডের পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায় সমুদ্রসৈকতে জেট স্কি করছেন।
২০০৪
ভারত সিরিজের শেষ টেস্টে পিঠের ইনজুরিতে পড়েন। বোলিং করতে পারেননি ওই ইনজুরির কারণে, কিন্তু নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসের শেষদিকে ব্যাটে ঝড় তুলে ১৪ বলে করেছিলেন ২৮। অধিনায়ক ইনজামাম সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যেই শোয়েবের ইনজুরি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। ইনজুরিটা আসল, না নকল তা যাচাই করতে তদন্তও করে পিসিবি। অস্ট্রেলিয়া সফরে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে ম্যাচ রেফারি অভিযুক্ত করেন তাঁকে।
২০০৬
ভারতের বিপক্ষে ফয়সালাবাদ টেস্টের পর তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সে সময়ের ভারত কোচ গ্রেগ চ্যাপেল। এরপর অ্যাঙ্কেল ইনজুরির কারণে ওয়ানডে সিরিজ খেলা হয় না তাঁর। যদিও গুজব ছড়িয়ে পড়ে আইসিসির সতর্ক পর্যবেক্ষণ এড়াতেই সিরিজের বাইরে রাখা হয়েছিল তাঁকে।
পারফরম্যান্সবর্ধক স্টেরয়েড ন্যানড্রোলন নেওয়ায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে বাদ পড়েন। পিসিবির ড্রাগবিষয়ক বিশেষ আদালত ডোপ নেওয়ার কারণে শোয়েব ও আসিফকে দু বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। পরে আপিল কমিশনের রায়ে শাস্তি তুলে নেওয়া হয়।
২০০৭
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে প্রয়াত কোচ বব উলমারের সঙ্গে তর্কাতর্কি করেন। এর জন্য জরিমানাও গুনতে হয় তাঁকে। টোয়েন্টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দলের প্রস্তুতি ক্যাম্পেও নিয়ম ভঙ্গ করেন। আগস্ট মাসে ম্যানেজারকে না জানিয়ে ছেড়ে আসেন করাচির প্রস্তুতি ক্যাম্প। পরে বোর্ডের ডিসিপ্লিনারি কমিটির শুনানিতে হাজিরা দিতে হয়। কিন্তু সেখানেও গরহাজির। কমিটির অনুমতি না নিয়ে প্রস্তুতি ক্যাম্প ছেড়ে যাওয়ার অপরাধে ১ লাখ এবং শুনানিতে হাজির না হওয়ার জন্য ২ লাখ−মোট তিন লাখ রুপি জরিমানা করে তাঁকে। আপিল করে জরিমানা থেকে মুক্তি পেলেও আইসিএলে যোগ দেওয়ার হুমকি দিয়েই নাকি শাস্তি মওকুফ করিয়ে নেন।
সূত্রঃ প্রথম আলো ৮/৮/২০০৭ খেলাধুলা
কৃতজ্ঞতাঃ মুর্শেদের ইউনিকোড লেখনী ও পরিবর্তক ১.৭.২ (এপ্রিল ২৫, ২০০৭)