আমার মতে ধূমপান বেশি খারাপ
- একজন মদ্যপায়ী মূলত: নিজের ক্ষতি করছে, কিন্তু একজন ধূমপায়ী নিজের বারোটা বাজানো ছাড়াও আশেপাশের সবার ক্ষতি করছে। প্যাসিভ স্মোকিং বা সেকেন্ড-হ্যান্ড স্মোকিং: আপনি একজন ধূমপায়ীর কাছে থাকেন, তাহলে প্যাসিভ স্মোকিং-এর মাধ্যমে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাবের ৮০% পর্যন্ত আপনার শরীরে প্রবেশ করবে। এছাড়া ইদানীং থার্ডহ্যান্ড স্মোকিং নামে একটা নতুন ব্যাপারও আবিষ্কার হয়েছে: বলা হচ্ছে, ধূমপায়ী সিগারেট নিভিয়ে ফেলার পরও অনেকক্ষণ পর্যন্ত বাতাসে residual tobacco smoke contamination থাকে - এর কারণেও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
মেডিকাল দিক থেকে চিন্তা করলে, ওয়াইন শুধু হজম নয় - অনেক কিছুর জন্যই ভালো। রেড ওয়াইন রক্তে কোলস্টেরল কমায়, এছাড়া ব্লাড প্রেশার কমানো এবং স্ট্রোকের রিস্ক কমাতেও রেড ওয়াইনের ভূমিকা আছে। তবে রেড ওয়াইনের সবচাইতে চমৎকার বেনিফিট হলো এর এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কন্টেন্ট: ফ্ল্যাভোনোয়ড, ফেনোল ইত্যাদি তো আছেই, সেই সাথে আছে ইদানীং সাড়া-জাগানো রেজভারাট্রল (Resveratrol)।
এই কম্পাউন্ডটা ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক জাপানী গবেষক আবিষ্কার করেছিলেন - সাম্প্রতিককালে রেজভারাট্রল নিয়ে প্রচুর গবেষণা চলছে। অনেকদিন আগে রেজভারাট্রল সম্পর্কে নিউ সাইন্টিস্ট ম্যাগাযিনে একটি বিশাল আর্টিকল পড়েছিলাম, ঐখানে বলেছিলো রেজভারাট্রল বিংশ শতাব্দীর ওয়ান্ডার ড্রাগ হবার যোগ্যতা রাখে। বিভিন্ন ল্যাব এক্সপেরিমেন্টে হাই-ডোজ রেজভারাট্রল দিয়ে পশুর জীবনের ব্যপ্তি (লাইফ স্প্যান) ৫০-৬০% পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব হয়েছে, এটার চমৎকার এ্যান্টি-এজিং (বয়স বাড়া রোধ করার) গুণ রয়েছে। এছাড়া রেজভারাট্রল ডায়াবিটিস রুগীদের ক্ষেত্রে সুগার ও কোলোস্টেরল কমাতে পারে, হৃদরোগ এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে বলেও পড়েছিলাম। তবে এখনো প্রাথমিক রিসার্চ পর্যায়ে আছে কেমিক্যালটি - ঐ ম্যাগাযিনে পড়েছিলাম, খুব হাই-ডোজে রেজভারাট্রল দেয়ার পরে উল্টো এই ড্রাগের কারণেই লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে অনেক ল্যাব এ্যানিম্যাল।
আংগুরের চামড়া এবং বিচিতে থাকে রেজভারাট্রল - তাই রেডওয়াইনেও আরেকটু কনসেন্ট্রেটেড অবস্থায় থাকে। সমস্যা হলো, রেজভারাট্রলের ভালো ইফেক্ট পাবার জন্য এই পরিমাণ যথেষ্ট না। রেজভারাট্রল খুবই দামী, কয়েক মিলিগ্রামের দাম শত শত ডলার! ইতিমধ্যেই অবশ্য আর্টিফিশিয়াল রেজভারাট্রল এ্যানালগ বানানো সম্ভব হয়েছে - এটা কেমন কার্যকরী কে জানে?
তেমনি বিয়ারেরও অনেক বেনিফিট আছে - বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেলস থাকে বীয়ারে।
মজার ব্যাপার হলো - এদের বেশিরভাগ ভালো ইফেক্টগুলোই কিন্তু নন-এ্যালকোহলিক। বীয়ারে সম্ভবত: ৪-৫% ইথানল থাকে, ওয়াইনে সম্ভবত: ১০-১২%। তো এই ইথানলের পার্টটা বাদ দিলে বাকি যে ৯০-৯৫% নন-এ্যালকোহলিক পার্ট থাকে, সিংহভাগ হেলথ বেনিফিট কিন্তু এখান থেকেই আসে। কাজেই কেউ যদি বলে যে মদ খেলে অনেক সুফল পাওয়া যাবে, টেকনীকালী সে ভুল বলছে। বীয়ার বা ওয়াইন থেকে যদি এ্যালকোহল রিমুভ করা যায়, তাহলেও হয়তো সমস্ত বেনিফিটগুলোই পাওয়া যাবে।
তবে এই ব্যাপারে সন্দেহ নাই, মদের বেশিরভাগ খারাপ ইফেক্ট যেমন লিভার সিরোসিস, হার্ট এ্যাটাক, ক্যান্সার, সামাজিক কুপ্রভাব, রোড-ট্রাফিক এ্যাক্সিডেন্ট ইত্যাদি সবই হয় এ্যালকোহলের প্রভাবে। খেয়াল করলে দেখবেন, ঘুরেফিরে শুধু ওয়াইন এবং বীয়ার (যাদের ৯০%+ই "ভেজাল")-এর উপকারীতার খবর পাওয়া যায়, কিন্তু যেসকল পানীয়তে এ্যালকোহলের পরিমাণ বেশি (হুইস্কী, ভদকা - ৪০%-৮০% বা আরো বেশি পরিমাণ এ্যালকোহল থাকে) এদের ব্যাপারে সাধারণতঃ নেগেটিভ তথ্যই শোনা যায়।
ভদকার তথ্যটা সঠিক না। গতবছর ল্যানসেটের একটি রিপোর্টে লিখেছিলো রাশিয়ার এ্যাডাল্টদের (১৫-৫৫ বছর) অর্ধেকেরও বেশি অপমৃত্যুর কারণ হলো এ্যালকোহল এবং সিগারেট (পুরুষদের ৭০% এবং নারীদের ৫০% :
ALCOHOL CAUSES MORE THAN HALF OF ALL THE PREMATURE DEATHS IN RUSSIAN ADULTS
এই প্রসংগে আমার একটি টেকনিকাল প্রশ্ন আছে: মদ বলতে ঠিক কি বোঝায়? ফক্স ভাই ফার্মাসিস্ট, তিনি সম্ভবত: এই প্রশ্নের উত্তর ভালো জানবেন। কোনো জিনিসে এ্যালকোহল থাকলেই কি মদ বলতে হবে? তাহলে তো বাজারের প্রাণ ম্যাংগো জ্যুসকেও তো মদ বলা যায় - ফ্রুট জ্যুসেও সামান্য পরিমাণ এ্যালকোহল থাকে (০.১-০.২% এর মত)। বা ভরপেট ভাত খাবার পরে ঘুম ঘুম আরাম ভাব লাগে কেন? ভাতের স্টার্চ আপনার পেটে গিয়ে ফার্মেন্টেড হয়ে ইথানল প্রস্তুত করছে। জাপানীরা চাউল ফার্মেন্ট করে সাকে (রাইস ওয়াইন) তৈরী করে - ভাত খেলেও মোটামুটি কাছাকাছি রেজাল্ট হচ্ছে। 
আপডেট: আরেকটি চমৎকার ব্যাপারে লিখতে ভুলে গেছিলাম। মেডিকেল সাইন্সে The French paradox বলে একটি ব্যাপার প্রচলিত আছে। আমেরিকান ডাক্তার এবং FDA-র কল্যানে আমরা মোটামুটি সবাই জানি সুস্বাস্থ্যের জন্য লো-ফ্যাট ডায়েট, নিয়মিত এক্সারসাইয, ধূমপান থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন।
কিন্তু ফ্রেন্চরা কি করে? এদের খাবারদাবারে ফ্যাট ভর্তি। ফ্রেন্চরা এক্সারসাইযও করে আমেরিকানদের চাইতে কম। আবার ফ্রান্সে ধূমপায়ীদের সংখ্যাও আমেরিকানদের চাইতে বেশি। এদের তো বেচেঁ থাকাই পাপ। ইটালীয়ানরাও ফ্রেন্চদের মতই - হাই-ফ্যাট ডায়েট, কম এক্সারসাইয, ধূমপান। দীর্ঘজীবি মানুষদের জন্য জাপান বিখ্যাত - আর জাপানের মধ্যে ওকিনাওয়া অন্চলের লোকেরা সবচাইতে দীর্ঘজীবি হয়। ফ্রেন্চদের মত এদের ডায়েটেও প্রচুর চর্বি থাকে, যেটি জাপানের অন্যান্য অন্চলে দেখি নাই।
মজার ব্যাপার হলো - ফ্রেন্চদের মধ্যে হৃদরোগে মৃত্যুর পরিমাণ আমেরিকানদের চাইতে অনেক অনেক কম! এ জন্যই এটাকে বলে French paradox। উইকির এই পেইজে বেশ কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছে - এদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো - রেড ওয়াইন। রেড ওয়াইনের পলিফেনল, ফ্ল্যাভনয়েডস ইত্যাদি কম্পাউন্ডগুলো হার্ট, ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি সুরক্ষা করে।
Calm... like a bomb.