টপিকঃ প্রথম ভুত দর্শন
ভুত বলতে আসলেই কি কিছু আছে নাকি পৃথিবীতে? আমি জানিনা। তবে থাকলেও বা কি! তারা কি আমাদের খুব বেশি ক্ষতি করছে? আমি মনে করি তারা যদি থেকেও থাকে, তো অন্যান্য প্রানীদের মত তারা হয়তবা বসবাস করছে আড়াল করে। ক্ষতি হয়তবা আমরা নিজেরাই নিজেদের করে থাকি। ভীত প্রানী হিসেবে আমরা হয়তবা ভুত আসার আগেই ভুতের খাদ্য হয়ে যাই। যাগ্গে বেশিদিন আগের কথা না, বছর ৭-৮ হবে। পরীক্ষা শেষ, বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরে সময় কাটাই, খাই আর ঘুমাই। তো সেদিনও এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছি আড্ডা মারতে বসেছি প্রায় বেশ কয়েকজন। জমপেশ আড্ডা মারতে মারতে সন্ধ্যা শেষে কখন যে রাতের প্রবেশ ঘটেছে তাও জানিনা। তার আগে আমি আমার পরিবেশটার কথা বলে নেই, আমরা গ্রামের বাড়ীতে থাকতাম তখন। আমার ওই বন্ধুর বাড়ী ছিল আমাদের গ্রামের প্রায় পাশেই, ১০ মিনিট লাগে একটু তারাতারি হেটে গেলে। তো সবাই যার যার বাড়ী যেতে শুরু করলম আমিও রওনা দিলাম। দুই গ্রামের মাঝে একটু সরু রাস্তা, যার চারপাশে কোন বাড়ীঘর নাই, এখন অবশ্য লোকালয়ের মত শুরু হয়েছে, আগে তাও ছিল না। একদম নিস্তব্ধ পরিবেশ, গাড়ী বা রিকশা মাঝে মাঝে যায় তবে খুব একটা না। তবে এই রাস্তার মধ্যে একটা ব্যপার রয়েছে এই যে, আমাদের গ্রামে প্রবেশের সময় ডান পাশে ২০০ মিটার দূরে একটা চিতা আছে। হিন্দুদের যেখানে দাহ করা হয়। অনেকেই বলে ওইখানে নাকি অনেক কিছু আসে, এটা সেটা। কিন্তু আমার ভুত বলতে কোনদিনও কোন রকম ভয় ছিল না। যেই কারনে ভীতভাবে না হেটে খুব সুন্দর ভাবেই হাঠছি। একটা রোমান্টিক ভাব চলে আসছিল মনে, আকাশে চাঁদ আর তারা, সাথে জোছনা। তো প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছি, আমাদের গ্রামের শুরুতেই কিছু গাছ-পালা দিয়ে রাস্তাটা ঘেরা, তার পাশেই দুইটা বাড়ী, দুই দিকে। ওই গাছ গুলোর নিচে চলে আসলাম, চাদেঁর জোছনায় পুরো রাস্তায় গাছের ছায়া। দেখতে ভালোই লাগছে। চারোপাশে একবার চোখ বুলালাম। তারপর সামনে তাকালাম হঠাৎ দেখি আমার থেকে প্রায় ১০ হাত দুরে একটা মহিলা সাধা কাপড় পড়ে বসে আছে রাস্তার ডান পাশে। থমকে দারিয়ে গেলাম, প্রায় দুই তিন সেকেন্ড দারিয়ে, হাঠবো নাকি না!! মহিলাটির কোন নড়াচড়ার ভাব ভঙ্গিও বুঝা যাচ্ছে না। শুধু দেখলাম বসে আছে। কি করব? ভাবছি কিন্তু পিছনে হাঠবো না এবং কাউকে ডাকবো না এটা ভেবে রেখেছি। আল্লাহর নাম বলে পা ফেল্লাম সামনে যাচ্ছি, মহিলাটা বসেই আছে। কে? নাকি ভুত টুত? মনে নানা প্রশ্ন বাধছে তখন। এভাবে সামনে আরো এগুলাম। আমি প্রায় ৫ হাত দুরে, পুরো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, একটা সাদা কাপড় পড়া কেউ বসে আছে। কিন্তু তার শরীর বা কোন হাড় নেই। তখন আমার মনে কি অবস্থা আমি জানি না। সামনে বাড়ছি একপা একপা করে। আমি কি সত্যিই কোন ভুত দেখছি নাকি কিছু!! আচ্ছা এই মহিলা কি আমাকে মারবে টারবে? আমি তার পাশে গেলে সে কি করবে? এরকম কৌতুহল বাড়তে শুরু করল। সাহস করে পুরো গতিতে মহিলার পাশে গিয়ে দারালাম। এরপর যা হল তা আমি নিজেও কখনো ভাবিনি বা আসা করিনি। হয়তবা যদি ওই ঘটনা না ঘটতো, তো আজকে এভাবে লিখতে পারতাম না, এত আগ্রহ নিয়ে জীবনের প্রথম ভুত দেখার অভিজ্ঞতা। আমরা আসলেই অনেক কিছু দেখে না বুঝেই এমনিই ভয় পাই, আর এই ভয়টাই করে দেয় আমাদের দুর্বল। আর সেই দুর্বলতা আমরা কেউ প্রকাশ করি একটু অন্য রকম করে, কেউবা খুব আনন্দে। এটাই....আমার ব্যপারটা পুরোটাই ছিল সাহসীকতার মত। আজও ভাবি সামনে আবার কবে ভুত আসবে!! কবে আবার কখন এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা গ্রহন করব। মজার একটা ব্যপার থাকে, থ্রিলার থ্রিলার ভাব, যেন শেষের পুরো ব্যপারটা প্রকাশ পেয়ে গেলেই মজাটা পুরো সমাপ্ত। অসমাপ্ত থ্রিলার সমন্ধেও একটা ধারনা আছে, যা আজও অজানা। আজও নিস্তব্ধ, কিন্তু জাগ্রত।
ওহো আপনাদের মনে নিশ্চই প্রশ্নটা টান টান করছে কি হয়েছিল আসলে? আসলেই কিছু না। শুধু আমার চোখে দেখার দোষ ছিল, যেই সাধা কাপড় পড়া মহিলাটিকে আমি দেখছিলাম। সেই মহিলাটি হচ্ছে পাশের বাসার বাহিরের লাইটের একটা ছায়া। যা গাছ বেয়ে ঠিক ওই রাস্তার কোনে বসে ছিল, মহিলা হয়ে। হয়ত আজও আছে!! কেউ কি দেখতে চান?